Posts

গল্পঃ চিরকুটে অচেনাজীবন

Image
সকালে ব্রেকফাস্ট না সেরেই তাড়াহুড়ো করে ভার্সিটি এসেছি। ম্যামের ক্লাস শেষে তাই রেভেনাসে এসে নুডুলস খাচ্ছিলাম। একা। দোকানটার বামপাশে তখন শুধু আমি, সামনে আর ডানপাশটায় কিছু ছেলেমেয়ে গল্প করছিলো।  দ্রুত খাচ্ছিলাম, ক্লাস এখনি শুরু হবে। হঠাৎ আমার সামনে একটা মেয়ে এসে দাঁড়ালো। লাল জামা পড়া, একগাছি লালচুড়িতে হাত রাঙানো, ভীত হরিণীর মতো চোখদুটোয় যেন সমুদ্রের সব জল খেলা করছে। মেয়েটাকে চিনিনা, চোখের দিকে তাকালাম, যেন বেশ অস্বস্তিতে আছে, ভীত। বললাম, কিছু বলবেন? চুড়ি পড়া কম্পিত হাতে তখন আমার দিকে ও একটা চিরকুট এগিয়ে ধরলো। তারপর আর কিছু না বলেই ঘুরে দাঁড়িয়ে চলে গেলো। তার চলে যাওয়া পথের দিকে কিছুক্ষণ অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে রইলাম। যেন বসন্তের সব ফুল তার পিছুপিছু চলে গেলো। কি লিখেছে ও? চিরকুট টা মেলে ধরলাম, "আগামী একমাসের ভিতর ওজন ৫ কেজি বাড়াবেন, আপনার প্রয়োজনে না হোক, আমার প্রয়োজনেই। এত শুকনা মানুষ হয় নাকি, হুহ?  আপনার সাথে সব জনমে সব সময়ের সঙ্গী হবো , অন্যকারো কথা ভাবলে ভাবনায় ঢুকে খুন করে ফেলবো কিন্তু।  -ফার্স্ট ইয়ার।" চিরকুট পড়ে মাথাটা যেন খালি হয়ে গেলো, ...

গালিব আফসারীর একগুচ্ছ হাইকু

Image
গালিব আফসারীর একগুচ্ছ হাইকু হাইকু- ০১ . মৃত্যু আসলে হেরে যায় মানুষ ফুলের মত। হাইকু- ০২ . তুমিও জানো অস্তিত্বহীন আমি তোমাকে ছাড়া। হাইকু- ০৩ . পাখিরা জানে আকাশে উড়লেই মেঘেরা মৃত। হাইকু- ০৪ . প্রতি প্রবাহী বিদেহী আত্মা, আমি স্বপ্ন মরে না। হাইকু- ০৫ . কখনো এসো একবার, না এলে বিরহ আসে। হাইকু- ০৬ . আকাশে মেঘ বৃষ্টিরা ভয় পায় নেমে আসতে। হাইকু- ০৭ . ক্ষুব্ধ সকাল, এখনো সূর্যটার ঘুম ভাঙেনি। হাইকু- ০৮ . বৃদ্ধ মানুষ প্রজাপতি হারায় বয়স থাকতেই।

গালিব আফসারী'র গল্পঃ ব্রাইট অন্ধকার এবং কষ্টেরা

Image
||১|| ছেলেটা একটা ওয়ার্কশপে কাজ করতো। দোকানটা জেলা পরিষদের সামনে, একটা বটগাছ ছায়া দিয়ে রেখেছে। বৃষ্টি হয়, বটগাছ আড়াল করে রাখে; রোদ হয়, গাছের নিচে ছায়া হয়ে থাকে। রাস্তা দিয়ে রিক্সা যায়, টুংটুং, গাড়ি যায়। মানুষও যায়; অমানুষ গুলো থাকে। ছেলেটার বয়স মাত্র ১২ বছর। প্রতিদিন যখন গ্যারেজের সামনে দিয়ে ছোটছোট বাচ্চারা সুন্দর পোশাক পড়ে কাঁধে ব্যাগ নিয়ে ইস্কুলে যায়, আবার বিকেলে আসে; ও দীর্ঘক্ষণ তাকিয়ে থাকে। তারও যেতে ইচ্ছে করে, এমন করে। এই রাস্তা দিয়ে ভালো জুতো-পোশাক আর কাঁধেচাপা ব্যাগ নিয়ে ইস্কুলে যাচ্ছে, বন্ধুদের সাথে কথা বলতে বলতে, পকেটে হাত, পকেটে মায়ের দেয়া ১০ টি টাকা; টিফিনের জন্য। ছেলেটার স্বপ্ন দেখতে খুব ভালো লাগে। -ওই তানবীর‍্যা, হা কইরা কি দেখোস হারামজাদা। কাম কর। নবাবী ছুটাইমু তোর, কাম কর তাড়াতাড়ি। মালিকে তাগাদা দেয়। তানভীর কাজে হাত চালায়, দ্রুত। এই বয়সেই ও ভালো কাজ শিখে ফেলেছে। গ্রিলদেয়া জানালা বানাতে পারে একাই, স্টিলের খাট, আলমারি আর দরোজা বানাতে পারে, কেউ সাথে থাকলে। কেউ একটু যত্ন নিয়ে দেখিয়ে দিলেই অনেক কাজ করতে পারে। রহিম চাচা বলেন, তানবীর, তুই বড় হইয়া অনেক বড় মিস্তি...

বিশ্ব বই দিবস ও সভ্যতা বাঁধাই করা কিছু হাত

Image
আজ ২৩ এপ্রিল বিশ্ব বই দিবস। ইউনেস্কোর উদ্যোগে ১৯৯৫ সাল থেকে প্রতিবছর এই দিবসটি পালন করা হয়ে থাকে। বই দিবসের মূল উদ্দেশ্য হলো, বই পড়া, বই ছাপানো, বইয়ের কপিরাইট সংরক্ষণ করা ইত্যাদি বিষয়ে জনসচেতনতা বাড়ানো। সর্বোপরি লেখক, পাঠক, প্রকাশকদের সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ করা। বিশ্ব বই দিবসের মূল ধারণাটি আসে স্পেনের লেখক ভিসেন্ত ক্লাভেল আন্দ্রেসের কাছ থেকে। ১৬১৬ সালের ২৩ এপ্রিল মারা যান স্পেনের আরেক বিখ্যাত লেখক মিগেল দে থের্ভান্তেস। আন্দ্রেস ছিলেন তার ভাবশিষ্য। নিজের প্রিয় লেখককে স্মরণীয় করে রাখতেই ১৯২৩ সালের ২৩ এপ্রিল থেকে আন্দ্রেস স্পেনে পালন করা শুরু করেন বিশ্ব বই দিবস। এরপর দাবি ওঠে প্রতিবছরই দিবসটি পালন করার। অবশ্য সে দাবি তখন নজরে আসেনি কারোই। বহুদিন অপেক্ষা করতে হয় দিনটি বাস্তবে স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য। অবশেষে ১৯৯৫ সালে ইউনেস্কো দিনটিকে বিশ্ব বই দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেয় এবং পালন করতে শুরু করে। এরপর থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রতিবছর ২৩ এপ্রিল বিশ্ব বই দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। উল্লেখ্য, ২৩ এপ্রিল শুধুমাত্র বিশ্ব বই দিবসই নয়, শেক্সপিয়র, সত্যজিৎ রায়, ইনকা গার্সিলাসো ডে লা ভেগাসহ প্রমুখ খ্য...

রোবাইয়াৎ হোসেনের কবিতা "পথিক"

Image
পথিক - রোবাইয়াৎ হোসেন ভালবাসার পথিক আমি অনেক পথ হেটেছি, পাইনি ক্লান্ত অনেক, শরীর হয়েছে ভারী তোমায় দেখে হঠাৎ থমকে দাড়াই তবে কি তুমিই সেই..? সহস্র পথ দিয়েছি পাড়ি যার জন্য নিজের সাথে করেছি আড়ি। যার খোলা চুলে হারাবো বলে কালোকে বেসেছি ভালো। যার পায়ের নুপুরের শব্দ শুনবো বলে শুনিনি বৃষ্টির ধ্বনি। যার মিস্টি মুখের হাসির অপেক্ষায় থেকেছি দীর্ঘকাল, দৃষ্টি করেছি নিবদ্ধ। যার চেখের কাজলে উদাস হবো বল পথিক হয়েছি, হাটছি দীর্ঘকাল।

তালকানাঃ আয়না ভাঙার আগে নিজে ঠিক হোন

Image
গল্পটা   হয়ত অনেকেই আগে শুনে থাকতে পারেন। এক বুড়ি পুলিশের কাছে অভিযোগ করে কইলো, তার সামনের ফ্লাটের এক বুইড়া ঘরের ভিত্রে ন্যাংটো হয়ে চলাফেরা করে। এই অশ্লীল কাণ্ডখানা দেখে বুড়ি নাকি মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ছে। বুড়োর শাস্তি হওনের দরকার বলে তিনি মনে করেন। তখন পুলিশ বুড়ির বাসায় এসে জিগাইলো, কোথায় সেই অসভ্য বুড়োটার ঘর? এখনো কি সে এমন অশ্লীলতা করতেই আছে? বুড়ি উত্তর দিলো, ড্রইংরুম থেইকা বুড়ার ঘর দেখা যায়না, বাথরুমে যাইতে হবে আমাগো। তো পুলিশ বাধরুমে গেলো। বাধরুমের জানালা উঁচুতে। কিছুতেই দেখা যায়না। তখন বুড়ি কইলো, একটা টুল লাগবো। টুলে উঠে দাঁড়াইলেই বুড়োটার অসভ্যতা দেখা যাইবো! গেই সময়ে গল্পটা অনে-ক কিছুর সাথেই প্রাসঙ্গিক। আমি বললাম না। আপনেরা জ্ঞানীগুণী মানুষ, বুইঝা লন। © গালিব আফসারী'র রঙমশাল। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের র‍্যাগিং সংস্কৃতি ও আমাদের নোংরা মানসিকতা

Image
বিশ্ববিদ্যালয়ে র‍্যাগিং নামক নির্যাতনের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছেনা স্বাপ্নিক নবীনেরা। বড় ক্যানভাসে এসেও সঙ্কীর্ণ আচরণ করা এসব ছাত্র নামধারী কিছু পশুর জন্য পরিবার ও রাষ্ট্রের টাকা অপচয় করে সনদ দিয়ে কি হবে? বরং জাতি আরো বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে উচ্চশিক্ষা নেয়া এদের দ্বারা। -পরিচিত হওয়ার কথা বলে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের ছাত্র মিজানকে ডেকে নিয়ে কিছু সিনিয়র তার ওপর চালায় র‍্যাগিং এর নামে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন। তাকে হল ত্যাগের নির্দেশ দেয়া, গুম ও হত্যা পর্যন্ত করে ফেলার হুমকি দেয় সিনিয়রেরা। নির্যাতন সইতে না পেরে অচেতন হয়ে পরে মিজান, এরপরে এমনই ভীত হয়ে পড়ে যে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে সে। সে তার বন্ধুদের এবং বাবা চাচাকেও চিনতে পারেনা এবং সবার সাথে পাগলের মত আচরণ করা শুরু করে। এখন সে হাসপাতালে আছে। -ঐ জাবিতেই জুনিয়রদের কারা কারা র‍্যাগ দিতে যাবে এ নিয়ে দ্বন্দ্ব বাঁধে ছাত্রলীগের দু-গ্রুপের মাঝে। যখন তাদের মাঝে আর সমঝোতা হলো না যে, কে কে যাবে জুনিয়রদের সাথে পরিচয় পর্বের নামে র‍্যাগিং চালাতে, তখন তাদের মাঝে মারামারি লেগে যায়। সংঘর্ষে কয়েকজন হাত-পা, মাথা ফেটে নেয়, আহত হয়...

জোছনার ফুল হয়ে ঝরা ভালোবাসারা

Image
তোমার প্রতি কোন অভিযোগ নেই দূরে যাও, পাখিদের আলোকচক্রে  ভীনদেশী নক্ষত্রে বসে থাকো স্মৃতির উঠোন পেরিয়ে। কাছে আসো, কবিদের কাল্পনিক প্রেমিকার ছায়াদেহ মাড়িয়ে। হারিয়ে গেলে স্বস্তিক প্রথম ছোঁয়া  আমি কখনওই বলবো না, রেখে যাও অনুরত আকাশপথ। জীবনের সফেদ নিঃশ্বসিত ভালোলাগারা হামাগুড়ি দিয়ে ভুল করে চলে গেলে কখনো, আদর জড়ানো আঁচলায় বেঁধে নিও  জোছনার ফুল হয়ে ঝরা ভালোবাসারা চুপিচাপি কোন এক রাতে ভুল করে চলে গেলে কখনো, আদর জড়ানো আঁচলায় বেঁধে নিও এর বেশি কেউ চায়নি কখনো, কোন প্রেমিকার কাছে,  আর কিছু না রাখো, চাওয়াটা রেখে দিও। © গালিব আফসারী'র কবিতা

মাঝেমাঝে মৃত স্বপ্ন নিয়ে ভাবি

Image
তোমাকে আর কোনোদিন ভালোবাসতে বললে, নির্বাসনে যাবো।  একটা টানা ঝুলবারান্দা থাকবে, বড় বড় ধানের ডুলী রাখা মাচা আর মেঝেতে শালকাঠের ইয়া-বড় সিন্ধুক ওয়ালা মেঝের একপাশে আড়াআড়ি পেতে রাখা বড় চৌকি।  চৌকাঠ পেরিয়েই টানা বারান্দা, তুমি হাত ঝুলে দাঁড়িয়ে থাকবে, উত্তর দিকে মুখ করে। ও দিকে দুটো রাজহাঁস তেড়ে যাচ্ছে আমাদের ছোটোবোন বিলুর দিকে। বিলু বড় একটা লাঠি নিয়ে ভয় দেখাচ্ছে ওদের। আর তুমি, তাই দেখতে দেখতে হেসে ফুলখড়ি ঝরাচ্ছো পুরোনো বারান্দায়। তোমার লম্বা বিনুনি, পিঠবেয়ে নেমে আসে, আর বিকেলবেলা শালিকের দল, ঘরে ফেরার ব্যস্ততায় দেখে নেয় পৃথিবীর সৌন্দর্য।  ঐ যে বাড়ির পাশের বড় পুকুরটার পানির মতো স্বচ্ছ টলমলে তোমার চোখ, চোখ থেকে ভালোবাসা নামিয়ে এনে শরীরে, নকশীকাথায় তোমার আমার রাত্রিনিবাস ভ্রমণবৃত্তান্ত লিখে রাখে অক্লেশ জঠর।  আমাদের আলিশান বাংলোর দরকার নেই। উঠোনজুড়ে ধুলিকণার সাথে বেড়ে ওঠা আকাশের নীচে ছায়াময় দুটো লিচুগাছ, মাচান বসানো লাউগাছের লম্বা ডানায় ভর করে নেমে আসা পিঁপড়ের ঝাক, টুঁই ফুঁড়ে ঝুলে থাকা বাবুইয়ের ভালোবাসা আর কলার ভেলায় ভাসা বারো মাসে আট টি বান। এই ...

কেমন আছে আমার জল-জোছনার দিনগুলো?

Image
বাড়ীর পাশেই নদী। বর্ষাকালে এ কূল থেকে ও কূল দেখা যায় না। শুধু পানি আর পানি। শীত বসন্তে নদীতে তেমন পানি থাকেনা, নদী তখন দু-তিন ভাগ হয়ে যায়। মাঝখানে বিশাল চর পড়ে। ছোটবেলায় করতাম কি, সকালে ঘুম থেকে উঠে প্রতিবেশি কয়েকজন ছেলে মিলে এই নদীতে জাল নিয়ে দল বেঁধে যেতাম মাছ ধরতে। (আমরা যে জাল নিয়ে যেতাম আমাদের ওদিকে তার নাম হ্যাঙা জালি) দুপুর পর্যন্ত মাছ মারতাম। পুটি, বালিয়া, বরেলি, ছাইতান, গচই, আরও কত কত মাছ ধরে খলই বোঝাই করে যখন মাথার উপর রোদটা একদম অসহ্য লাগতো, ক্ষুধায় পেট চোঁচোঁ করতো, তখন ফিরে আসতাম। যখন বাড়ীতে ফিরতাম আমার মা মাছগুলো দেখে সেই খুশি হতো। গোসল করার জন্য টিউবওয়েল চেপে পানি তুলে দিতো, গাঁয়ে পানি ঢেলে ময়লা পরিষ্কার করে দিতো। গোসল শেষে জামাকাপড় ধুয়ে দিতো। তারপর আমাকে বসিয়ে রেখে সেই মাছগুলো তৎক্ষণাৎ আলু-পিয়াজ আর মসলা দিয়ে চমৎকার করে রান্না করে আমাকে খেতে দিতো। বিশ্বাস করুন, মায়ের সেই মাছভাত এতোই সুস্বাদু ছিলো যে এখনও আমার কাছে পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ খাবার মায়ের হাতের সেই মাছভাত। আমি দিন-দুনিয়া সব ভুলে চোখ বন্ধ করে সেই খাবার গোগ্রাসে গিলতে থাকতাম। আহ! সে কি মজা! একবারের ঘটনা,...

আমি এবং একাকীত্বঃ জাহিদুল ইসলামের ভাবনা

Image
আমি এবং একাকীত্ব জাহিদুল ইসলাম "প্রত্যেকের বুকের নিভৃতে কিছু দগ্ধ ক্ষত থাকে লুকানো, কিছু অসম্পূর্ণ নির্মাণ, ভাঙাচোরা গেরস্থালী ঘরদোর, প্রত্যেকের নিজস্ব কিছু নিদ্রাহীন রাত্রি থাকে, যাকে চিরদিন নষ্ট নখের মতো রেখে দিতে হয় কোমল অনিচ্ছার বাগানে যাকে শুধু লুকিয়ে রাখাতেই সুখ, নিজের নিভৃতে রেখে গোপনে পোড়াতেই একান্ত পাওয়া"- কবি রুদ্র মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ একাকিত্ব , শব্দটা আজ আমার বড়ই চেনা। জীবনের কোনো না কোনো বাঁকে তার সাথে মুখোমুখি দেখা হয় আমার প্রত্যেক বেলাতে । আবার অনেকেই আছে, একাকিত্ব যাদের জীবনের সাথে জড়িয়ে গিয়েছে অঙ্গাঙ্গীভাবে। একাকিত্বই হয়ে উঠেছে জীবনের মূল সুর, সেই একাকিত্ব ঝড় আজ পাহাড়চূড়ায় বিস্তৃত রূপ লাভ করছে। "ধ্রুপদী আঙিনা ব্যাপী কন্টকিত হাহাকার আর অবহেলা, যেন সে উদ্ভিদ নয় তাকালেই মনে হয় বিরান কারবালা এই সে একাকিত্ব। মানুষ তার জীবনে যখন তখন একা হয়ে যেতে পারে, কিছু সময়ের জন্য। একা হওয়াটা খুব খারাপ কোন ব্যাপার না। আমার বাবা-মা আমাকে বাসায় একা রেখে কোথাও যেতে পারে, আমি রাস্তায় একা একা চলাফেরা করতে পারি, জীবনের কোন না কোন সময় একা হওয়াটা খুবই স্বাভাবিক।...

গালিব আফসারীর গল্প "হারামজাদা"

Image
(বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে, তার সম্মানার্থে উৎসর্গিত)  রিহান ক্লাস ফোরে পড়ে। ফুলগাছ নামে গ্রামের ছায়াঢাকা পিছঢালা রাস্তাটার পাশেই ওদের দোতলা স্কুল, স্কুলে মাত্র একটাই বিল্ডিং। রিহানের বাড়ি থেকে স্কুল প্রায় ২০ মিনিটের পথ। প্রতিদিন সকালে মা রিহানকে সুন্দর করে সাজিয়ে দেয়, ব্যাগে বই ভরে দেয় আর সাথে দেয় ২০ টি টাকা। ক্ষিধে পেলে সদাই কিনে খাওয়ার জন্য। তারপর রিহান স্কুলের এই এতটুকু পথ একা একাই যায়। সকালের পিছঢালা রাস্তার পাশের ছোটো ছোটো ঘাসের উপর গুটিগুটি পা ফেলে রিহান স্কুলে যায়। সেদিন দুপুরবেলা, রিহানদের ক্লাসে হেডমাষ্টার এসে বললেন, আগামী ১৭ তারিখ আমাদের এই দেশের সবচেয়ে ভালো মানুষটির জন্মদিন। আমাদের জাতীর পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সেইদিন জন্মেছিলেন। তাই বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন পালন করার জন্য আমাদের স্কুলে ছবি আঁকার প্রতিযোগিতা হবে। তোমরা সবাই সেখানে ভালো ভালো ছবি আঁকবে। যে সবচেয়ে ভালো আঁকতে পারবে তার জন্য আছে অনেক বড় পুরস্কার। স্কুল থেকে ফেরার সময় রিহান হেডমাস্টারের কথাগুলো ভাবতে লাগলো। আমাদের জাতীর পিতার জন্মদিন। আম্মু বলে, বঙ্গবন্ধুর জন্যই নাকি আমরা এই দেশটা প...

জাহিদুল ইসলামের কবিতা 'ভ্রান্তির মুখোমুখি'

Image
ভ্রান্তির মুখোমুখি জাহিদুল ইসলাম সপ্তরঙ্গে বাঁধা পেরিয়ে আজ আমি দিশেহারা নব্যপথিক, জানি না আমার কেন এমন হলো। কেন আমার ভোর কাটে না সন্ধ্যার আলো জ্বলে না? কেন আমার মনের মাঝে মন থাকে না?                        কেউ জানেনা? বাঁকা পথে কষ্ট নিয়ে অতোটা পথ একলা এলাম নির্ঘুমের নিস্তব্ধতায় তবে কেন এত হাহাকার? পথভ্রষ্টে এক আমি নিশ্চুপ থেকে গেলাম শুনলো না কেউ সাতরাঙ্গা স্বপ্নের ডাক, চুরমার হয়ে গেলাম, তবু আবার এলাম। শালিক তার বাচ্চা নিয়ে যেমন করে চিল থেকে বিপদ পেরোয়, আমিও ঠিক তেমনি করে নিক্বণ সুরে আলোর মশাল হাতে নিয়ে আর শুভ্রতাকে বুকে নিয়েই সাতসাগর পাড়ি দিবার জয়কন্ঠে প্রাণে। কেউ শুনবে না, তবু ও বলতে এলাম আমি ফিরবো আবার কোন সাতরঙা স্বপ্ন নিয়ে, এই স্বপ্নহীন শহরের মাঝে!

একজন দরিদ্র স্কুলছাত্র ও প্রতিপক্ষ টাকার দুনিয়া

Image
আমি তখন ক্লাস নাইনে পড়ি। আমাদের বার্ষিক পরীক্ষা চলছে। প্রথম পরীক্ষার দিন, আমরা সবাই পরীক্ষা দিতে এসেছি। প্রশ্ন দেয়া হয়ে গেছে, খাতায় লিখছি। হঠাৎ আমাদের ক্লাস টিচার এসে বন্ধু মহিমের নাম ধরে ডাকলো। বললো, তুমি পরীক্ষার ফি দাওনি তো, ফি এনেছো? মহিম কিছু বললো না। মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইল। স্যার তখন বকা দিলেন, ফি যখন আনোনি তখন পরীক্ষা দিতে এসেছো কেনো? বেরোও হল থেকে, যাও। আমি ওর দিকে তাকিয়ে দেখলাম, মাথা নিচু রেখেই ও চলে যাচ্ছে, চোখের নিচে অশ্রু টলমল করছে ওর। মহিম খুব দরিদ্র ছিলো। বাবা দিনমজুর। বইখাতা ঠিকমতো কিনতে পারতোনা। দুবেলা ঠিকমতো খেতে পারতোনা। কিন্তু অনেক ব্রিলিয়ান্ট স্টুডেন্ট ছিলো মহিম। আর খুব ভালো একজন ছেলে ছিলো ও। আমি পরীক্ষা শেষ করে ওর বাড়িতে গেলাম। বাড়িতে পেলাম না। বাড়ির পাশেই বিশাল নদী। নদী ঘেষে বিশাল খেলার মাঠ। আমি জানি মহিমকে এখন কোথায় পাওয়া যাবে। গেলাম। গিয়ে দেখি, ও নদীর গাঁ ঘেষে বসে আছে, চোখে তখনো অশ্রু টলোমলো, কাঁদছে ও। ভালো ছাত্র, টাকার অভাবে পরীক্ষা দিতে পারেনি বলে! কিছুক্ষণ আগে পত্রিকায় দেখলাম, ফরিদপুরে নবম শ্রেণীর এক ছাত্রী রেজিস্ট্রেশন ফি দিতে পারেনি। টাকার ...

ভালোবাসা ও আইন

Image
কখন যেন পুরোনো অনুভুতি গুলো খন্ড খন্ড হয়ে ভালবাসায় রূপান্তরিত হয়েছে! কয়েক গুচ্ছ অদ্ভূত ধরনের বৈধ কিংবা অবৈধ ভালবাসার চাষাবাদ! ভালবাসার একটা পদ্ধতি থাকাটা জরুরি! যেমন ধরেন, অবৈধ ভালবাসা নিষিদ্ধ! একদম অবৈধ ভালবাসা করা যাবে না। ভালবাসলে বৈধ ভালবাসার নিয়ম কানুন জেনে ভালবাসতে হবে। এমন একটা আইন দেশের আইন সভায় পাস করা অতি প্রয়োজন! কেমন যেন সবাই অবৈধ ভালবাসাটা কে আঁকড়ে ধরতে চায়! যেন দেহ বিনিময় ভালবাসা! একটা প্রচলিত নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে, ভালবাসায় সব কথা হবে। এটা ঠিক নয়, একটা সীমিত সিলেবাস ভালবাসায় থাকা জরুরি! নিদিষ্টি কিছু কথা বলা যাবে না! একদম নিষিদ্ধ! ভালবাসাটা বাদামের খোসায় খুঁজতে হবে!দামি রেস্টুরেন্টের চিকেনে নয়! একটা সীমাণা থাকাটা ভালবাসায় মানায়! না হয় ভালবাসা উপহাসীত হয়ে যায় একদম! অতিরিক্ত কিংবা মাত্রা অথবা সীমাতিরিক্ত ভালবাসা নিষিদ্ধ! বিজ্ঞাপণ আইন করে দেওয়া হবে, একবারই ভালবাসা যাবে!দুটো ভালবাসায় জড়াতে গেলেই ফাঁসি! নিজেকে ভালবাসা থেকে দূরে রাখা যাবে না! একদম না! সবাই কে একটি করে ভালবাসা বাধ্যতামূলক! আইন-কানুন, ন্যায়-নীতি ভালবাসা! ভালবাসার বিপরিত ভালবাসায়! © ...